শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

ফটোশপ এর্ং আমি

যে সকল মহান ব্যক্তিদের কারনে আমরা পেয়েছি আজকের এই ফটোশপ এবং 

ফটোশপ এর ইতিহাস সহ পেছনের কিছু গল্প

আসসালামু আলাইকুম,
বিজয়ের মাসে বিজয়ী ভাব ভাব অবস্থায় ভালো আছেন সবাই আশা করি। আমাদের জাতীয় জীবনে যে কয়টি মাস ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ন স্বাক্ষী হয়ে আছে তার মধ্যে ডিসেম্বর অন্যতম। স্পষ্ট করে বললে ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। আর সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের টিউন লেখা শুরু করলাম।
গ্রাফিক ডিজাইনারগন মুলত তিনটি প্রোগ্রামেই তাদের ডিজাইন কাজটি করে থাকেন। তার মধ্যে এডবি ফটোশপ হলো ইমেজ এডিটিং এর জন্য পৃথিবীর সেরা প্রোগ্রাম। অন্যদিকে এডবি ইলাষ্ট্রেটর ভেক্টর ভিত্তিক ডিজাইনের জন্য, এডবি ইনডিজাইন প্রিন্টিং ও প্রেসের প্রজেক্টগুলোর কাজে খুব বেশি পরিমানে ব্যবহৃত হয়।
আজ শুধুই এডবি ফটোশপের আলোচনা। ফটোশপকে আমরা সবাই অনেক ভালোবাসি কারন পেশাদার ডিজাইনার থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার এমনকি শখের বসে যারা ফটো এডিটিং করেন তারাও ফটোশপ দিয়েই তাদের কাজ করেন। ফটোশপের ব্যবহার অনেক সহজ, টুলস গুলো সুন্দরভাবে সাজানো এমনকি একটি ডিজাইনকে চমকপ্রদ করে তুলতে যা যা করা লাগে প্রায় সবকিছুই ফটোশপে রয়েছে। তাই ফটোশপ ডিজাইনার, ফটোগ্রাফারদের কাছে এত জনপ্রিয়।
কিন্তু বলতে কিছুটা খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে আমরা অনেকেই ফটোশপের উৎপত্তি থেকে শুরু করে আজকের অবস্থানে আসার ইতিহাস, কোন কোন মহান ব্যাক্তিদের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ফটোশপ পেয়েছি তা জানিনা। আর এই অজানা বিষয়কে জানার জন্য আজকের লেখা। আলোচনার বিষয়টিকে আমরা ঘুরিয়ে এভাবেও বলতে পারি
“যে সকল মহান ব্যক্তিদের কারনে ফটোশপ পেয়েছি আমরা তাদের সম্মন্ধে বিস্তারিত জানব আমরা আজই”

কারা সেই মহান ব্যক্তি আসুন জেনে নেইঃ


Thomas knoll পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। জন্ম আমেরিকার Michigan, গ্রেজুয়েশান শেষ করেন University of Michigan  থেকে। তার ভাই Jhon knoll যিনি পেশায় Visual effects supervisor. তাদের বাবা Glen knoll ছিলেন University of Michigan  এর একজন প্রফেসর।
সময়টা ১৯৮৭ সাল। তখন Thomas knoll একজন Phd student.  তিনি Macintosh Plus  এর জন্য একটি গ্রাফিক এপ্লিকেশন ডেভলপ করেন। এই এপ্লিকেশনটি এক কালারের পর্দায় সাদা-কালো ছবি শো করতে ব্যবহার হত। Knoll  এটির নাম দিয়েছিলেন Display. মূলত এই display এপ্লিকেশনটিকে Father of photoshop বলা যায়্।
Thomas knoll এর ভাই Jhon knoll প্রোগ্রামটি দেখলেন। Jhon knoll ফটোর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহী ছিলেন। Jhon  তার ভাই Tom কে একটি ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম বানানোর জন্য রাজি করালেন। তখন Thomas knoll তার চলমান শিক্ষা জীবন থেকে ৬ মাসের বিরতি নিয়ে তৈরি করেন ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম যেটির নাম দিতে চেয়েছিলেন Image pro. কিন্তু কপিরাইট সংক্রান্ত জটিলতার কারনে সে নামের বদলে আমরা পেয়ে যাই ফটোশপের প্রথম ভার্সনফটোশপ ০.৭। দুই ভাইকে একটু দেখে নেই-
Thomas Knoll
Thomas Knoll
Jhon Knoll

ফটোশপের শুরু দিকের ভার্সনগুলোঃ

ফটোশপ ১.০ >>

সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ এডবি কর্পরেশন ফটোশপ প্রোগ্রামটি কিনে নেওয়ার পর এর ফিচার এ ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ ডিজিটাল কালার এডিটিং ও ইমেজ রিটাচিং সহ ফটোশপ ১.০ ভার্সন রিলিজ হয়। SciTex এর মত উচ্চমানের ফ্ল্যাটফরমে ব্যবহারের জন্য এটি চালু হয় এবং সাধারন মানের একটি Photo retouching এর জন্য ৩০০ ডলার ব্যয় করতে হত তখন।

ফটোশপ ২.০ >>

জুন ১, ১৯৯০ আর নতুন ফিচার যুক্ত করে ফটোশপ ভার্সন ২.০ রিলিজ করে। এই ভার্সনে যুক্ত করা হয় adding Paths, CMYK color and the Pen tool এর মত গুরুত্বপূর্ন ফিচারগুলো।
১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চালানোর উপযোগী করে ফটোশপ ২.৫ রিলিজ করা হয়। এই ভার্সনেই ফটোশপে প্যালেট যুক্ত করা হয়।
১৯৯৪ সালে ফটোশপ ৩.০ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে ফটোশপের লেয়ার প্যানেল যুক্ত করা হয়। এই লেয়ার যুক্ত হওয়ার ফলে ডিজাইনারদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। অনেক জটিল বিষয় সহজ হয়ে যায়। আসলে সবই সম্ভব হয়েছে Thomas Knoll এর জন্য।

ফটোশপ ৪.০ >>

প্রায় দুই বছর পর ফটোশপের পরবর্তী ভার্সন ফটোশপ ৪.০ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে যুক্ত করা হয় Adjustment layer ও  macro ফিচারদুটি। এছাড়াও ফটোশপের user interface  যুক্ত করা হয় এই ভার্সনে। একটু ভেবে দেখুন ডেভেলপারদের অক্লান্ত পরিশ্রম না থাকলে এ্কটি ইমেজে ওয়াটারমার্ক দিতে আমাদেরকে কতইনা কষ্ট করতে হত আজও।

ফটোশপ ৫.০ >>

১ মে ১৯৯৮ ফটোশপের ভার্সন ৫.০ রিলিজ করা হয়। Editing type, Undo command, History panel, Magnetic lasso tool প্রভৃতি ফিচার চালু করা হয় এই ভার্সনে। ইমেজ এডিটিং এ কিছু বিষয় কত সহজ হয়ে গিয়েছে এই ভার্সনটি রিলিজ হওয়ার পর। এরপর মাত্র ১ বছর পর ফটোশপ ৫.৫ রিলিজ করা হয়। এই ভার্সনে Save for web  ফিচারটি যুক্ত করা হয়। আর এর সাথে সাথে PNG ফরমেট এ ইমেজ এক্সপোর্ট করার ব্যবস্থাও পেয়ে যায়।

ফটোশপ ৬.০ >>

বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষপ্রান্তে ফটোশপ ৬.০ রিলিজ হয়। ভেক্টর শেপ, টাইপ টুল, ব্লেনডিং অপশান প্রভৃতি ফিচার যুক্ত করা হয় এই ভার্সনে। এই ভার্সনে টাইপ টুল হয়েছে আরও সহজ। চোখ ধাধাঁনো এফেক্ট দেওয়ার জন্য ব্লেনডিং মোড এই ভার্সনেই পরিপূর্নতা পায়।

ফটোশপ ৭.০ >>

ফটোশপ ৬.০ রিলিজ হওয়ার ঠিক ২ বছর পর এ যাবত কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত ভার্সন ফটোশপ ৭.০ রিলিজ হয়। খুব সহজে ফাইল ও ফোল্ডার ব্রাউজ করার জন্য ফাইল ব্রাউজার, ব্রাশ ও প্যাচ টুল যুক্ত হয় এই ভার্সনেই। ফটোশপের পূর্ন রুপ বলতে আমরা এই ভার্সনকেই বুঝি। আজও অনেক বড় বড় বিখ্যাত ডিজাইনগন ফটোশপ ৭.০ তে কাজ করেন।

ফটোশপ ‍ক্রিয়েটিভ স্টুডিও (সিএস ৮.০) >>

যেহেতু ফটোশপের ডেভলপমেন্ট একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে চলছে। ডেভেলপারগন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে নিত্যনতুন ফিচার যোগ করার কাজে। ২০০৩ সালে ডিজাইনারদের প্রয়োজনীয় সবকিছু, গ্রাফিক ডিজাইনে লে-আউট ফিচার, ফটোগ্রাফির সবকিছু যুক্ত করে ফটোশপ রিলিজ করে ফটোশপ ৮.০ (সিএস)। Script, language, grouping of layer  প্রভৃতি ফিচার যুক্ত করা হয় এতে। যা কিনা এই প্রোগ্রামটির অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়।

ফটোশপ সিএস ২ >>

২০০৫ সালে ফটোশপ সিএস ২ ভার্সন রিলিজ হয়। Red-eye removal tool, Vanishing point tool, Smart object এর মত ফিচার নিয়ে আসে এই ভার্সনে যার সাহায্যে ফটোশপের এডিটিং হয়ে উঠে কোন ধরনের Quality লস করা ছাড়াই। সত্যিই ধন্যবাদ দিতে হয় ডেভেলপার টিমের প্রত্যেকটি সদস্যকে।

ফটোশপ সিএস ৩.০ >>

২০০৭ সালে ফটোশপ সিএস ৩.০ রিলিজ হওয়ার পর এই সফটাও্য়্যারে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্ফতন দেখতে পাই। টূলস এ ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এর নেভিগেশান প্রক্রিয়া ফটোশপে কাজ করাকে আর দ্রুততর করে তোলে। ক্যামেরা র ও কুইক সিলেকশান টুলের মত চমতকার বিষয়গুলো যুক্ত হয় এই ভার্সনে।

ফটোশপ সিএস ৪ >>

২০০৮ সালে ফটোশপের নতুন ভার্সন সিএস ৪ আসে। Panning, Zooming, Masking, Adjustment panel ফিচারগুলোকে আধুনিক করে ডিজাইনার কাজকে আরও দ্রুতগতির ও আর চমকপ্রদ করার বিভিন্ন কমান্ড আসে এই ভার্সনে।

ফটোশপ সিএস ৫ >>

২০১০ সালে ফটোশপ সিএস ৫ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে যুক্ত হয় Puppet Warp Tool, Bristle tips, Mixer Brush and Automatic Lens correction প্রভৃতি ফিচারগুলো। Masking ফিচারটিকে আরও আধুনিক করা হয় এই ভার্সনে।

ফটোশপ সিএস ৬ >>

মে ৭, ২০১২ বহুল প্রতিক্ষিত ফটোশপ সিএস ৬ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে সম্পূর্ন নতুন একটি ইউজার ইন্টারফেস আমরা পেলাম। যাতে নিজেদের সুবিধা মত কালার এডজাস্ট করা সম্ভব। Auto saving, patch tool, move tool, blur gallery,vector shape with dash and dotted stroke প্রভৃতি নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ ফটোশপকে পরিপূর্ন করার যা প্রয়োজন সবই করা হয়েছে এই ভার্সনে। ভিডিও, এনিমেশন তৈরি করা অনেক সহজ হয়েছে এই ভার্সন আসার পর।

ফটোশপ Creative Cloud (সিসি) >>

ফটোশপ সিএস ৬ এর মজা পুরোপুরি নিতে পারলামনা। ঝড়ের বেগে রিলিজ হয়ে গেল ফটোশপের একেবারে লেটেস্ট ভার্সন Photoshop creative cloud (CC). এটি মূলত আসে সফটওয়্যার পাইরেসি কমানোর লক্ষ্যে যাতে করে এডবি কোম্পানি তাদের খরছটা কমাতে পারে। যে কারনে তারা ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু অর্থ এর বিনিময়ে এটি এডবি থেকে ব্যবহার করার সুযোগ/সেবাটি রেখেছে।
Smart sharpen ও Camera sharp reduction এর মত অবিস্বাশ্য কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে এই ভার্সনে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই তাহলে দেখব Thomas Knoll ও Jhon Knoll ভাইদ্বয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় Display দিয়ে যা শুরু হয়েছিল তার আধুনিক সংস্করন হলো বর্তমান ফটোশপ সিসি। বর্তমান ভার্সনটি দিয়েই গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইনের প্রয়োজনীয় কাজ, ভিডিও এডিটিং, সীমিত এনিমেশন প্রভৃতি খুব সহজেই করা সম্ভব। এডবি কোম্পানির ডেভেলপার গন যে ভ্রত নিয়ে  সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা ভবিষ্যতে ফটোশপকে অন্য ভুমিকায় আর অত্যাধুনিক চেহারায় দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। আমরা সবাই সে অপেক্ষায় থাকি এবং বর্তমান পর্যায়ে যতটুকু পেয়েছি তার সুধা পান করি।
“আমরা সবাই ফটোশপ ভালোবাসি”

শেষ কথাঃ

এই প্রোগ্রামটির বহুমুখি ব্যবহার ডিজাইনারদের জন্য অাশির্বাদ। এই লেখাটি একটি তথ্যমূলক লেখা। যতগুলো তথ্য তুলে ধরা হয়েছে সবই সঠিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে চেষ্টা করব আবার এরকম তথ্যসমৃদ্ধ লেখা নিয়ে হাজির হবার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন আশা করি। কোন প্রশ্ন থাকলে মতামত অংশে জানাবেন। নিজের কাছে ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে জানানোর দায়িত্ব নিবেন আশা করি। কারন জ্ঞান বিতরনে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয় সবসময় এটা চরম সত্য।
আজ আর নয়। আবার আসব। আর সরাসরি আমাকে পেতে নিচের ইমেজ লিংকে ক্লিক করে ফেসবুকে আসুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
































ঢাকা

ঢাকা


ঢাকা (ইংরেজিDhaka, অতীতে Dacca বানানটি ব্যবহৃত হত) বাংলাদেশের সংবিধানের৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী[৩] বাংলাদেশের রাজধানী এবং ঢাকা বিভাগের প্রধান শহর। ঢাকা একটি মেগাসিটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহরও বটে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। ঢাকার মহানগর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ।.[২] এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম[৪] এবং সর্বাপেক্ষা ঘন জনবহুল শহরগুলির অন্যতম। ঢাকা শহরটি মসজিদ শহর নামেও পরিচিত।[৫] এখানে বিশ্বের সেরা মসলিনউৎপাদিত হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্বের রিকশা রাজধানী নামেও পরিচিত। এই শহরে রোজ প্রায় ৪০০,০০০টি সাইকেল রিকশা চলাচল করে।[৬] বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল শাসকদের অধীনে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিল। সে যুগে ঢাকা ছিল প্রাদেশিক রাজধানী এবং বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনে। এই সময় কলকাতারপরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহৃত হলে ঢাকা তার প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদাটি হারায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। পরে ১৯৭১ সালে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষিত হয়। ইতিপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তাণ্ডবলীলার মতো একাধিক অস্থির ঘটনার সাক্ষী থাকে এই শহর।
আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিকসাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র।[৭]এই শহরের নগরাঞ্চলীয় অবকাঠামোটি বিশ্বে সর্বোন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেষ্ট পরিষেবার অভাব ইত্যাদি শহুরে সমস্যাগুলি এখানে প্রকট। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঢাকার পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে এই শহর প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ টানতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসেন জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এই কারণে ঢাকাও হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী।[৮][৯]

নামকরণের ইতিহাস

পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান গির্জার প্রবেশপথ
ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে,সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।
আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলাররাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে 'ঢাক' বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো।
ঢাকা নগরীকে বর্তমানে বর্তমানে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে - ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষিণই মূলতঃ মূল নগরী। ঢাকা উত্তর ঢাকার নবীন বর্ধিত উপশহরগুলো নিয়ে গঠিত।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

লালবাগের কেল্লা মোঘল আমলের একটি স্থাপনা

১৮৯৫-১৯০০ সময়কালে পিলখানা এলাকায় হাতির পালের দৌড়।
ধারণা করা হয় কালের পরিক্রমায় ঢাকা প্রথমে সমতট, পরে বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ঢাকা অধিকার করে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর নাম অনুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবিতকাল পর্যন্ত এ নাম বজায় ছিলো।
এর আগে সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো বিহারের রাজমহল। সুবা বাংলায় তখন চলছিলো মোঘলবিরোধী স্বাধীন বারো ভূইঁয়াদের রাজত্ব। বারো ভূইয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাকে করতলগত করতে ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা চালানো হয়। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরেরশাসনামলে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিযুক্ত করেন। তিনি ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে রাজধানী রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।
সুবেদার ইসলাম খান চিশতী দায়িত্ব নেবার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বারো ভূঁইয়ার পতন ঘটে ও বর্তমানচট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে পুরো সুবে বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।
১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা সুবা বাংলার রাজধানী হলেও সুবা বাংলার রাজধানী বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে।১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার শাহ সুজা রাজধানী আবার রাজমহলে স্থানান্তর করেছিলেন। শাহ সুজা'র পতনের পর১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর বেশ কিছুকাল ঢাকা নির্বিঘ্নে রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করার পর ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদেস্থানান্তর করেন। এরপর ঢাকায় মোঘল শাসনামলে চলতো নায়েবে নাজিমদের শাসন, যা চলেছিল ১৭৯৩ সালে[১০] ব্রিটিশ শাসন শুরু হবার আগে পর্যন্ত। ব্রিটিশরা রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে নির্বাচিত করলে ঢাকার গুরুত্ব আবারো কমতে থাকে। এরপর দীর্ঘকাল পর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা আবার তার গুরুত্ব ফিরে পায়। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকাকে আসামও বাংলার রাজধানী করা হয়। কংগ্রেসের বাধার মুখে ব্রিটিশ রাজ আবার ১৯১১ সালে রাজধানী কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ভূগোল

জাতীয় সংসদ ভবন
ঢাকা মধ্য বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ২৩o৪২' থেকে ২৩o৫৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০o২০' থেকে ৯০o২৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত এই শহরের মোট আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার (১৪০ মা)।[১১] ঢাকায় মোট ৫০ টি থানা আছে। এগুলো হলো -চকবাজারলালবাগ,কোতোয়ালিসূত্রাপুরহাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ, সবুজবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল,কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা। ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল)। এই জেলাটি গাজীপুরটাঙ্গাইলমুন্সিগঞ্জ,রাজবাড়ীনারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।[১২] ক্রান্তীয় বৃক্ষ, আর্দ্র মৃত্তিকা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান সমতলভূমি এই জেলার বৈশিষ্ট্য। এই কারণে বর্ষাকালে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঢাকা জেলায় প্রায়শই বন্যা দেখা যায়।[১৩]

আবহাওয়া ও জলবায়ু

ঢাকার জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ, বর্ষণমুখর এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয়। কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিভাগ এর অধীনে, ঢাকার জলবায়ু ক্রান্তীয় সমভাবাপন্ন। এই শহরের একটি স্বতন্ত্র মৌসুম রয়েছে, এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস(৮১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে তাপমাত্রা ১৯.৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের(৬৭ থেকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যে থাকে।[১৪] মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে গড়ে প্রায় ২১২১ মিলিমিটার(৮৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারাবছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮৭%।[১৪] যানজট এবং এবং শিল্প কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু এবং পানি দূষণ বাড়ছে, ফলে শহরের জনস্বাস্থ্য এবং জীবন মান মারাত্বকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।[১৫] ঢাকার চারপাশে জলাশয় এবং জলাভূমি গুলি ধ্বংসের সম্মুখীন কারণ, এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন এবং অন্যান্য আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দূষণের ফলে প্রকৃতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন।[১৫]

বর্তমান ঢাকা


ঢাকা স্কাইলাইন

স্থানীয় সরকার

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর সমাধি,চন্দ্রিমা উদ্যান

ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১ আগস্ট, ১৮৬৪ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে এটি "কর্পোরেশন"-এ উন্নীত করা হয়।[১৬] ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নামের স্ব-শাসিত সংস্থা ঢাকা শহরের পরিচালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এই শহর ৯০টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কমিশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। প্রতি ৫ বছর পরপর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচন করা হয়, যিনি প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে কাজ করেন।[১৭] ওয়ার্ড কমিশনারও ৫ বছরের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ রয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সকল সরকারী স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারী স্কুলের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে। তবে মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসমূহ এই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়।[১৮][১৯] বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রিয় বোর্ডের মাধ্যমে এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সমূহ একটি পৃথক শিক্ষাবোর্ড এবং প্রশাসনিক কাঠামোর অধিনে পরিচালিত হয়।[২০]
ঢাকায় সূর্যোদয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ১২টি পুলিশ স্টেশনে প্রায় ৬০০০ এরও বেশি পুলিশ সদস্য ছিলেন।[২১] শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশবাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ২৩০০০ এ উন্নীত করা হয়, এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ৩৩টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে নতুন আরও ১৮টি পুলিশ স্টেশন তৈরীর কাজ চলছে।
রাতে ক্রিসেন্ট লেক
ঢাকা শহর ২৫টি সংসদীয় এলাকায় বিভক্ত। এখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। রমনায় সচিবালয় অবস্থিত এবং এখানেই সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রণালয় রয়েছে।বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং ঢাকা হাই কোর্ট এই শহরে অবস্থিত। বঙ্গভবন ভারতের গভর্নর-জেনারেল, পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর এবং বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[২২] জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশ সরকারের এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ কার্যক্রমের কাজে ব্যবহৃত হয়। খ্যাতনামা স্থপতি লুইস কান এই জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি ছিলেন।[২৩]বায়তুল মুকাররম এদেশের জাতীয় মসজিদ, মক্কার কাবা শরিফের নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে এইমসজিদের ডিজাইন করা হয়েছে।[২৪] এই শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে বড় কাটরালালবাগ কেল্লাহোসেনী দালানআহসান মঞ্জিল,বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি।[২৫]

ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫% এই ব্যবস্থার আওতাভুক্ত , এর পাশাপাশি আরও ৩০% এই সুবিধা ব্যবহার করে সেপটিক ট্যাঙ্কের মাধ্যমে।[২৬] মাত্র দুই তৃতীয়াংশ লোক শহরে সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করতে পারে। এখানে প্রতি বছর ৯৭ লক্ষ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সরকারী এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার সাথে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কাছাকাছি নিচু এলাকায় অথবা জলাশয়ে ফেলা হয়ে থাকে।[১৫][২৬]

যাতায়াত

সদরঘাট নদীবন্দরে স্টিমারের চলাচল
ঢাকা শহরের মধ্যে যাতায়াত করার জন্য সর্বাপেক্ষা সহজলভ্য ও সস্তা যানবাহন হলো বাইসাইকেলরিকশা। ঢাকার রিকশা বিখ্যাত। শহরে সর্বমোট রিকশার সংখ্যা আনুমানিক ৩,২০,০০০।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এর মধ্যে মাত্র ৭০,০০০ রিক্সা নিবন্ধিত। বাইসাইকেল, রিক্সা ঢাকা শহরের রাস্তার যানজটের অন্যতম কারণ এবং কিছু বড় বড় রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাতিরঝিল-এর উপর অবস্থিত চলাচলের একটি সেতু।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন পরিচালিত বাস ঢাকা শহরের পরিবহনের আরেকটি জনপ্রিয় উপায়। এছাড়া রয়েছে বহু বেসরকারী বাস সার্ভিস। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ঢাকা শহরে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত কিছু যানবাহন (বেবি ট্যাক্সি, টেম্পো ইত্যাদি) বন্ধ করে দেওয়া হয় ও পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস (Compressed Natural Gas - CNG) বা সিএনজিচালিত সবুজ ট্যাক্সি চালু হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমে এসেছে।
ঢাকার অদূরে কুর্মিটোলায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর থেকে অাভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক র‌ূটে নিয়মিত বিমান চলাচল করে থাকে।

নাগরিক পরিষেবা


ঢাকায় নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। ঢাকা শহরের পানির চাহিদা পূরণের জন্য ঢাকা ওয়াসা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডেসা এবং ডেসকো, গ্যাস সরবারহ করার জন্য তিতাস গ্যাস প্রভৃতি সেবামূলক সংস্থা নিয়োজিত রয়েছে।

অর্থনীতি

ঢাকার কারওয়ান বাজার, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র
ঢাকা বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।[২৭] শহরে উঠতি মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা বাড়ছে পাশাপাশি আধুনিক ভোক্তা এবং বিলাস পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেই এই শহরে অভিবাসী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করে আসছে।[২৮][২৯][৩০] হকার, ছোটো দোকান, রিকশা, রাস্তার ধারের দোকান শহরের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ।[৩০][৩১] শুধুমাত্র রিকশা চালকের সংখ্যাই ৪০০০০০ এর বেশি।[৩২] কর্মপ্রবাহের প্রায় অর্ধেকই গৃহস্থালি অথবা অপরিকল্পিত শ্রমজীবী হিসাবে কর্মরত আছেন। যদিও টেক্সটাইল শিল্পে প্রায় ৮০০,০০০ এরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। তারপরও এখানে বেকারত্বের হার প্রায় ১৯%। [৩৩] ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের স্থাবর সম্পদের মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।[৩৪] বার্ষিক ৬.২% প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২১ হাজার ৫০০কোটিতে উন্নীত হবে।[৩৪] ঢাকার বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৩৫০ মার্কিন ডলার এবং এখানে প্রায় ৩৪% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে [৩৫] বসবাস করে। এই জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে[২৯] এবং এদের অনেকেরই দৈনিক আয় ৫ মার্কিন ডলারের কম।[৩৬]
শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলো হলো মতিঝিল, চকবাজার, নবাবপুর, নিউ মার্কেটফার্মগেট ইত্যাদি এবং প্রধান শিল্প এলাকা গুলো হল তেজগাঁও,হাজারীবাগ ও লালবাগ[৩৭] বসুন্ধরা-বারিধারা একটি উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক এলাকা এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই এলাকায় উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পকারখানা, কর্পোরেশন এবং শপিং মল তৈরী করা হবে।[২৯] ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রধানত গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ করর লক্ষ্যে তৈরী করা হয়েছিল। ঢাকায় মোট দুটি ইপিজেড-এ মোট ৪১৩টি শিল্প স্থাপনা রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ কর্মীই নারী।[৩৮] এই শহরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহত স্টক এক্সচেঞ্জ, এখানে তালিকাভুক্ত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিগ্রুপএইচএসবিসি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ,জেপি মর্গান চেজস্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক (বাংলাদেশ)আমেরিকান এক্সপ্রেসশেভরনজেয়ন মোবাইলটোটালব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামইউনিলিভারনেসলে,ডিএইচএলফেডএক্সব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ইত্যাদি। স্থানীয় বড় আকারের শিল্পগ্রুপ যেমন কনকর্ড গ্রুপ, র‌্যাংগস গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, টি কে শিল্প গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, নাভানা গ্রুপজামান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজরহিম আফরোজ ইত্যাদি প্রতিষ্টানের প্রধান বানিজ্যিক কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এই শহরেই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক[৩৯]ব্র্যাক এবং বাংলাদেশের প্রথম ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রগতি কো-অপারেটিভ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (প্রগতি ব্যাংক) এর প্রধান কার্যালয় ঢাকা বিভাগেই অবস্থিত।[৪০] নগরায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শহরের উন্নয়ন চলছে, নতুন নতুন বহুতল ভবন তৈরী হচ্ছে ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শহরের পরিবর্তন হয়েছে।[২৯] ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং, শিল্পোৎপাদন, টেলিযোগাযোগ এবং সেবা খাতে বিশেষভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যটন এবং হোটেল রেস্তোরাঁর উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। [৩০]

জনগোষ্ঠী

ঢাকার তোপখানা রোডের কাছে ফেরিওয়ালারা, জুলাই ২০০১
ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর যা বাঙালি সংস্কৃতির একটি ছবিও বলা চলে। ঢাকায় বসবাসকারীদের কিছু অংশের পূর্বপুরুষরা ভারতীয়। তারা অনেকেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে এসেছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিহারী মুসলমানও ছিলেন। এদের সংখ্যা বর্তমানে কয়েক লক্ষ। এখানকার বেশিরভাগ লোকমুসলমান সম্প্রদায়ের। কিন্তু সাথে বহু হিন্দুখ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলেন, পুরনো ঢাকা'র লোকেরা উর্দুতেও কথা বলে থাকেন। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করে। ঢাকা নগরী অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে যারা ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।
পুরনো ঢাকার স্থানীয় আদি অধিবাসীদের 'ঢাকাইয়া' বলা হয়। তাদের আলাদা উপভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় সারা বাংলাদেশ থেকেই এখানে লোকজন উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে আসে।

সংস্কৃতি

রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ উদযাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কে মূল ধরে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা একাডেমীচারুকলা ইনস্টিটিউটকেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগারও জাতীয় জাদুঘর এলাকা সংস্কৃতি-কর্মীদের চর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মূল ক্ষেত্র। এর বাইরে বেইলি রোডকেনাটকপাড়া বলা হয় সেখানকার নাট্যমঞ্চগুলোর জন্য। এছাড়াও নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং অন্যান্য মঞ্চসমূহ নাট্য ও সঙ্গীত উৎসবে সব সময়ই সাংস্কৃতিক চর্চাকে অব্যাহত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা জুড়ে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কেছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ সারাদিন গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক উৎসব চলে। সাংস্কৃতিক হৃদ্যতার ধারাবাহিকতায় সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান


ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় অবস্থিতবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সময় হতেই ঢাকা এই প্রাদেশিক রাজধানীর শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময়ই ১৯২১খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯৮০'র দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের এলাকাকে এডুকেশন ডিস্ট্রিক্ট বলা হতো। এই এডুকেশন ডিস্ট্রিক্টের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলআইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ , ভিকারুননেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজঢাকা কলেজনটর ডেম কলেজ,ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলইডেন মহিলা কলেজইষ্ট এন্ড হাই স্কুলঅগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়আজিমপুর গার্লস স্কুল,বেগম বদরুন্নেসা কলেজঢাকা মেডিকেল কলেজঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা আর্ট কলেজ(চারুকলা ইন্সটিটিউট) প্রভৃতি।
ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সৃষ্টি হয়েছিলো বৃটিশ শাসনামলে। তখন একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বুদ্ধদেব বসুর মতো ছাত্র এবং বিজ্ঞানীসত্যেন বোসের মতো শিক্ষক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে পুরান ঢাকায় ১৮৫৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চলে আসছে ।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত তিনটি মূল ধারা রয়েছে; এগুলোর প্রথমটি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম (যা বাংলা অথবা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করা যায়), দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি কেজি লেভেল হতে এ লেভেল পর্যন্ত ইংরেজি মিডিয়ামের বৃটিশ পাঠক্রম এবং তুতীয়টি হচ্ছে মূলত আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষানির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। মাদ্রাসাভিত্তিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম এবং কোনো কোনোটি নিজস্ব পাঠক্রম ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করে। শেষোক্ত এশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। এই একই চিত্র ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় একশভাগ প্রযোজ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর কেন্দ্রস্থলেরঅপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য
বলা বাহুল্য নয় যে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থিত। আশির দশক পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশে পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিলো। এর পর হতেই বেসরকারি খাতে কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের প্রসার হতে শুরু করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯৯৮খ্রিস্টাব্দে তার সংশোধন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এক বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নিয়ে আসে। এযাবত প্রায় ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। লক্ষণীয় বিষয় হলো এর মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।
ঢাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৩১টি পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি হচ্ছে ঢাকায়।[৪১] এগুলো হলো:
  1. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯২১);
  2. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৮/২০০৫);
  3. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯৬২);
  4. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯৯৭);
  5. শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ২০০১);
  6. বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ২০১০)।
বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।
ঢাকার উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
  1. ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
  2. নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
  3. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভারসিটি বাংলাদেশ
  4. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
  5. প্রাইম ইউনিভার্সিটি
  6. অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
  7. আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  8. ষ্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
  9. ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
  10. গণবিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯৯৮)

গণমাধ্যম


ঢাকা থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বাংলা দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইত্তেফাকসংবাদপ্রথম আলো, আজকের কাগজভোরের কাগজ, আমার দেশ, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাবনয়া দিগন্ত, সমকালমানবজমিন, পূর্বাঞ্চল, সংগ্রামকালের কণ্ঠ‌।
ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টুডে, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, নিউ এইজ, নিউ নেশন,ডেইলি স্টার, নিউজ টুডে। ঢাকায় অবস্থিত সংবাদ সংস্থাগুলো হলো বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ, (ইউ.এন.বি)
স্থানীয় টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি। এছাড়া স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিটিভি ওয়ার্ল্ডমাই টিভিচ্যানেল আইএটিএন বাংলাএনটিভিচ্যানেল ওয়ানআরটিভিবৈশাখী টিভিবাংলাভিশনদিগন্ত টিভিদেশ টিভিএকুশে টেলিভিশন,ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
ঢাকার রেডিও চ্যানেল (সরকারি ও বেসরকারি) বাংলাদেশ বেতার (সরকারি রেডিও চ্যানেল), রেডিও ফুর্তিরেডিও টুডেরেডিও আমারএবিসি রেডিও, বাংলাদেশ বেতারের ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম

খেলাধুলা

ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলার দৃশ্য
সারা বাংলাদেশের খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) (সাবেক ঢাকা স্টেডিয়াম) ও এর আশেপাশের এলাকা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি হলেও ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হকি, হ্যান্ডবলসহ আরো অনেক খেলা ঢাকায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এক সময় প্রতি বছর ঢাকা স্টেডিয়ামে আগা খান গোল্ড কাপ-এর মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সারাদেশের মানুষকে উদ্দীপিত করে রাখতো। অল্প কিছু সময় প্রেসিডেন্টস গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এছাড়াও ঢাকা স্টেডিয়ামে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছিলো এশিয়া কাপ, অনুর্ধ্ব ২১ ফুটবল টুর্নামেন্ট।
বর্তমানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তায় অন্যান্য খেলাধুলা ম্রীয়মান হয়ে গেছে বলা যায়। স্বাধীনতা পূর্বের ন্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম পূণরায় আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্টেডিয়ামগুলোতে এখন নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের খেলাধুলার সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া কাউন্সিল। এর সদর দপ্তর হচ্ছে ঢাকায়। এছাড়াও প্রায় ৩০টি ক্রীড়া ফেডারেশন ঢাকার সদরদপ্তর হতেই জেলা ক্রীড়া সমিতিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশের খেলাধুলার কার্যক্রম দেখাশোনা ও পরিচালনা করে। এই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন যার সদরদপ্তরও ঢাকায় অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো হলো: বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন; বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড; বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন; বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন; বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন; বাংলাদেশ শ্যুটিং ফেডারেশন; বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন; বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন; বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন; বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন; বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন; বাংলাদেশ আর্চারী ফেডারেশন; বাংলাদেশ এ্যামেচার এথলেটিক ফেডারেশন; বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশন; বাংলাদেশ তাইকুন্ডু ফেডারেশন।
ঢাকার উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকা সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম, ন্যাশনাল সুইমিংপুল, মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, উডেনফ্লোর জিমনেশিয়াম, ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি; মিরপুর জাতীয় ষ্টেডিয়াম ও তা সংলগ্ন সুইমিংপুল কমপ্লেক্স; মিরপুর জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়াম; বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌবাহিনীর সুইমিং কমপ্লেক্স। এছাড়াও ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ এবং কলাবাগান ক্লাব মাঠেও সারা বছর ধরে বিভিন্ন লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলা চলে।

ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ



বোটানিক্যাল গার্ডেনের লেকের একাংশ


সৌজন্যে ফেসবুকে আমি